মাঘ মাসের কয়েকদিন যেতেই প্রবল শীত পড়েছিল রাজ্যজুড়ে। তবে এবার সেই শীতের উপর কোপ ফেলেছে পূবালী হাওয়ার দাপট। হাওয়া অফিস জানিয়েছে যে ইতিমধ্যে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে একটি শক্তিশালী উচ্চচাপ বলয়। আর এই কারণেই সমুদ্র থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প প্রবেশ করতে শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের বুকে। এই কারণে রাজ্যজুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে পূবালী হাওয়ার প্রভাব। একইসঙ্গে ঝাড়খণ্ডের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই কারণেই মেঘ, বৃষ্টি ও পারদের ঊর্ধ্বগতির খেলা শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। এককথায় শীতের মাঝে বৃষ্টি-বাদল আবহাওয়া যেন বাংলা থেকে কাটছেই না।
তবে এবার এই রকম বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ার প্রভাব পড়তে চলেছে আমাদের জনজীবনের উপর। হয়তো ভাবছেন যে এই বৃষ্টিতে স্কুল-কলেজ-অফিস কামাই কিংবা কাজের অসুবিধার কথা বলছি না। এখানে কথা হচ্ছে আমাদের রোজকার জীবনের উপর প্রভাবের বিষয়ে। কারণ এই বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে চাষবাস। বিশেষ করে এই আবহাওয়ার কারণে আলু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হতে চলেছে বলে মনে করছেন চাষীরা। সেই কারণেই এবছর আলুর দাম যে বাড়তে পারে, তা মোটামুটি পরিষ্কার।
উল্লেখ্য, এবছর আলু চাষের শুরুতেই বৃষ্টির কোপ পড়েছিল বাংলার বুকে। আগের নিম্মচাপের কারণে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। বাংলার বুকে যেহেতু এই দুই জেলায় সবথেকে বেশি আলুর চাষ হয়, তাই গত নিম্নচাপের পর থেকেই বাংলার আলু চাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সেই দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর আরো একবার নতুন করে আলুর চাষ শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু এবারের বৃষ্টি সেই আলুর জমিও ভাসিয়ে দিচ্ছে। ফলস্বরূপ ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে রাজ্যের আলু চাষ।
এই বিষয়টি নিয়ে ঘাটাল মহকুমা-সহ কৃষি অধিকর্তা প্রশাসন শ্যামাপদ সাঁতরা বলেন, “আমার সাব-ডিভিশনে আলু কভার করে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর। কিছু আলু লাগানো হয়েছিল তারপর বৃষ্টি হয়েছিল, কিছু আলু লাগাতে দেরি হয়েছে। ক্ষেত পরিদর্শন করে আমরা দেখেছি, আলু গাছের বৃদ্ধি বা কন্ডিশন ভালো আছে, সমস্যা নেই। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খারাপ যাচ্ছে, হালকা বৃষ্টি হয়েছে, মেঘলা আকাশ রয়েছে, কুয়াশা হচ্ছে, তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে আলুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা তেমন কোনও রিপোর্ট পাইনি। তবে যেহেতু আবহাওয়া খারাপ, কুয়াশা হচ্ছে, চাষিদের বলব, আগাম সতর্কতা হিসেবে ৮-১০ দিন অন্তর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মাঠে কিছু কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।”