খাতায় কলমে বসন্ত এলেও রাজ্যের বুকে এখন চলছে অকাল বর্ষার দাপট। মার্চের শেষলগ্নেও যেন সেভাবে গরম পড়েনি বাংলায়, তেমনই দোলের আগেই তৈরি হয়েছে দুর্যোগের পরিস্থিতি। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে যে, ইতিমধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পার্বত্য এলাকায় ঢুকে পড়েছে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। এর কারণে শনিবার অবধি জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ডের মতো উত্তর-পশ্চিমে পার্বত্য এলাকার পাশাপাশি, অরুণাচলপ্রদেশ অসম, মেঘালয়, মণিপুর, ত্রিপুরায় বাড়ছে দুর্যোগের আশঙ্কা। আগামী শনিবার অবধি একাধিক রাজ্যের পাশাপাশি ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে দক্ষিণবঙ্গেও।
সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আর শনিবার পর্যন্ত চলবে এই অকাল বর্ষণ। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। আলিপুর থেকে প্রাপ্ত দিয়েছে রিপোর্ট ঝড় ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া জেলায়। এর মধ্যে কিছু জেলায় শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। এছাড়াও বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও ছিটেফোঁটা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
আর এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যের আলু চাষীরা। পূর্ব বর্ধমান থেকে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে হুগলি, যেসব জেলায় বেশি আলু উৎপাদন হয় সেখানেই চলছে বৃষ্টিপাত। এদিকে ৭০ শতাংশ আলু তোলা হলেও এখনো ৩০ শতাংশের মতো আলু রয়েছে জমিতেই। সেগুলি এখন রীতিমতো অথৈ জলে ভাসছে। সেই কারণেই ঋণ নিয়ে আলু চাষ করা কৃষকরা এখন রীতিমতো চিন্তায় পড়েছেন। কারণ ওই ৩০ শতাংশ আলুর বেশিরভাগই পচে নষ্ট হবে, তা নিশ্চিত। আর এই বিপুল পরিমাণ আলু নষ্ট হলে চাষীদের লাভের গুড় জর বৃষ্টিতে ধুয়ে যেতে চলেছে, তাও আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
এই সমস্যায় দাঁড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতার এক আলু চাষী বলেন, “মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে সাত বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছি। দুই বিঘা জমির আলু তুলতে পেরেছি। ফলনও ভালো পেয়েছি। কিন্তু পাঁচ বিঘা জমির আলু মাঠেই পড়ে আছে। সেই ফলন কতটা ভালো অবস্থায় ঘরে তুলতে পারব তা জানি না।” অপরদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারীর এক আলু চাষী জানান, “কয়েক দিন আগেই বৃষ্টি হয়েছে। জমি ভিজে। ফের বৃষ্টি হওয়ায় নিচু জমিগুলি কাদা হয়ে গিয়েছে। মজুর লাগিয়ে আলু তোলার পরে যে পরিমাণ ও মানের আলু মিলবে, তা বাজারে বিক্রি হবে না। হলেও মজুরের খরচ উঠবে না।” তাই এখন সরকারের তরফে যদি কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়, সেদিকেই তাকিয়ে আলু চাষীরা।