পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যেখানে ইতিহাস আজো কথা বলে। কারণ ইতিহাসের আমলে তৈরি নানা স্থাপত্য এখনো একইভাবে সদর্পে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাটির বুকে। রাজ্যের নানা ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে অন্যতম হল বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর। এটিকে প্রাচীন নগরী বললেও খব একটা ভুল হবেনা। কারণ প্রাচীনকালে তৈরি নগরের নানা চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে বিষ্ণুপুরের মাটিতে। লালমাটির দেশের এই শহর তাই রাজ্যের পর্যটন স্থলগুলির মধ্যে অন্যতম স্থান দখল করে। সেই কারণেই প্রতি বছর রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে, এমনকি দেশবিদেশের নানা প্রান্ত থেকেও হাজার হাজার পর্যটক এই শহরে ভিড় জমান।
বিষ্ণুপুর শহরে একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। মূলত টেরাকোটা নির্মিত বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির এখনো রয়েছে শহরে। যেমন রাসমঞ্চ, জোড় বাংলো, শ্যমরায় মন্দির, মদনমোহন মন্দির, লালজিউ মন্দির, গড় দরজা, জোড়া মন্দির এখানে বেশ উল্লেখযোগ্য স্থান। তবে বিষ্ণুপুরের বাইরেও রয়েছে এমন কিছু স্থান, যা দেখলে আপনার মনে পড়বে সুদূর ইতিহাসের কিছু কথা। বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি নিদর্শন এখনো রয়ে গেছে বিষ্ণুপুরের বুকে। এই স্থানটি সম্পর্কে অনেকেই এখনও জানেন না। আসুন এই নিবন্ধে জেনে নেওয়া যাক এই স্থান সম্পর্কে।
বিষ্ণুপুর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পরিত্যক্ত একটি বিমানঘাঁটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিমানঘাঁটি তৈরি করা হয়। এখন সেই বিমানঘাঁটির কোনো চিহ্ন না থাকলেও, ফাঁকা স্থান এবং তার উপর মোটা কংক্রিটের রানওয়ে এখনো বিদ্যমান সেখানে। এটি পিয়ারডোবা এরোডোম বামেও পরিচিত। এটি মূলত যুদ্ধে বিমান ওঠানামা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে এটিকে ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বিমান বাহিনীর বোম্বার কমান্ডের বেস হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে এই এয়ারফিল্ড ১৯৪৫ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায়। এই এয়ারফিল্ডের যুদ্ধোত্তর ইতিহাস আজ অস্পষ্ট। তবে আজও বিশাল, বিস্তৃত যুদ্ধকালীন এয়ারফিল্ডটি পরিত্যক্ত এবং বেহাল অবস্থায় রয়ে গেছে যুদ্ধের সাক্ষী হিসেবে।
এবার জেনে নিন কলকাতা থেকে কিভাবে যাবেন এই স্থানে। এর জন্য আপনাকে হাওড়া থেকে ট্রেন ধরতে হবে। শিরোমনি এক্সপ্রেস, রাঁচি-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস বা পুরুলিয়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে বিষ্ণুপুর স্টেশনে নামতে হবে। স্টেশন থেকে যেকোনো গাড়ি বুকিং করে পৌঁছানো যাবে এই ঐতিহাসিক স্থানে। এছাড়াও ধর্মতলা থেকে বাসে করে বিষ্ণুপুরে আসতে পারেন। সব ক্ষেত্রেই মাথাপিছু ২০০ টাকার মতো ভাড়া পড়বে।