‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’- স্কুল জীবনে এই শ্লোগান কমবেশি আমরা সকলেই দিয়েছি। গাছকে ভালোবাসতে সেখানো হয়েছে আমাদের সব পাঠ্যবইয়ে। আবার গাছ সহ প্রাকৃতিক পরিবেশকে রাখার স্বার্থে বছরের ৫ ই জুন দিনটিকে পরিবেশ দিবস হিসেবে পালনও করা হয় গোটা ভারতবর্ষে। কিন্তু তাতে লাভ কতটা হয়? এই প্রশ্নটা আজকের দিনে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। কারণ, গাছের প্রতি মানুষের এত প্রেম থাকলে এই বিপুল পরিমাণ দূষণ ও গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব পড়তো না আমাদের পরিবেশের উপর। আমরা কমবেশি সবাই এই বিষয়টি নিয়ে উদাসীন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই জীবন পার করে ফেলেছেন পুরুলিয়ার এক বৃদ্ধ। আর জীবনের শেষে এসে তার লড়াইকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে কেন্দ্র সরকার।
পুরুলিয়ার এই মহান ব্যক্তিটি হলেন দুখু মাঝি। তার নাম হয়তো শোনেন নি অনেকেই। কিন্তু এই যে মুক্ত বাতাসে আমরা প্রাণ খুলে স্বাস নিচ্ছি, তার নেপথ্যে অবদান রয়েছে এই বৃদ্ধের। কারণ, পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য তিনি ছোট বয়স থেকে গাছ লাগিয়ে আসছেন। জানা গেছে, পুরুলিয়ার মতো জেলায়, যেখানে রুক্ষ্ম মাটির ছড়াছড়ি, সেখানেই তিনি সবুজায়ন ঘটিয়েছেন দীর্ঘ ছয় দশক ধরে। কারণ, ছোট থেকেই সাইকেল নিয়ে আশেপাশে ঘোরা তার নেশা। আর ঘুরতে ফিরতে ফাঁকা জমি দেখলেই সেখানে গাছ লাগিয়ে ফেলেন তিনি।
আর এবার পুরুলিয়ার বৃদ্ধের পরিবেশের প্রতি এই অবদানকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে ভারত সরকার। এবার পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হবেন দুখু মাঝি। এতদিন যে দারিদ্রতার মাঝে দাঁড়িয়েও প্রকৃতির জন্য ভেবে গেছেন তিনি, আজ এই ‘গাছদাদু’র লড়াইকে জানবে গোটা দেশ। কেন্দ্রের তরফে দুখু মাঝির এই পুরস্কার প্রাপ্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণে তাই বলা হয়েছে, ‘আর্থিক অনটনের জন্য নিজের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। কিন্তু গাছ চুরি রুখতে উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া বের করার ক্ষেত্রে সেটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। পরিবেশের জন্য গাছের গুরুত্ব যে কতটা, সেটা বোঝানোর ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সেই বিষয়টি।’
প্রসঙ্গত, দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান হল ‘ভারতরত্ন’। তারপর জাতীয় স্তরের অন্যতম সম্মান হল পদ্ম পুরস্কার। এই পুরস্কার তিনটি বিভাগে দেওয়া হয়- পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী। ভারত সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্ম পুরস্কার শুরু করেছিল। ১৯৫৫ সালে এর তিনটি ভাগ হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। আর এবার এই পুরস্কারে ভূষিত হবেন পুরুলিয়ার এই ‘গাছদাদু’।