বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে নন্দীগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম হলেও, জেলা বা রাজ্যের মানচিত্রে নামটা তেমন একটা স্পষ্ট নয়। নন্দীগ্রাম হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া মহকুমার একটি ছোট্ট শহর। কলকাতা থেকে নন্দীগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এটি তিলোত্তমার দক্ষিণ-পশ্চিমে হলদিয়া নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। নন্দীগ্রাম হলদিয়া শিল্পকেন্দ্রের বিপরীতে অবস্থিত। সেই কারণেই এলাকাটি হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন। অন্যদিকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাত ধরেই বাংলায় ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল সরকার। তাই নন্দীগ্রাম আজো রাজনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু ভারতীয় রেলের মানচিত্রে নন্দীগ্রাম এখনো স্থান পায়নি। নন্দীগ্রামের রেলপথ হয়েও হয়নি শেষ। এই রেল রুট নির্মাণের কাজ শুরু হয় বহু বছর আগে। কেন্দ্রে তখন আসীন UPA সরকার। আর এই সরকারের অধীনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তিনিই এই রেল রুট নির্মাণের জন্য প্রথম অর্থ বরাদ্দ করেন। ২০১০ সালের বাজেটে এই রুটের জন্য ১৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মমতা। কাজও শুরু হয়। কিন্তু তারপর থমকে যায় সবকিছু। এখনো শ্রীহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে নন্দীগ্রামেরর রেল স্টেশনের বিল্ডিং। তবে এই কাজ আবার পুনরায় শুরু হচ্ছে বলে খবর।
রেলকে অন্য আঙ্গিকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে যেমন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো সেমি-হাইস্পিড ট্রেন চালু করা হয়েছে, তেমনই আবার ট্রেনের ট্র্যাকগুলিকে নবরূপে গঠন করা হচ্ছে কোনরূপ দুর্ঘটনা এড়াতে। তবে এর পাশাপাশি, দেশের স্টেশনগুলিকে সাজিয়ে তুলতে অমৃত ভারত স্কিম চালু হচ্ছে গোটা দেশে। ভারতীয় রেলের এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব স্টেশনকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে অন্যরূপে। অত্যাধুনিক পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের সুবিধার্থে নানা ব্যবস্থা চালু হচ্ছে স্টেশনে স্টেশনে। আর এবার এই প্রকল্পের আওতায় বাংলার বুকে নকটুন রেল রুট নির্মাণের কাজ শুরু করলো ভারতীয় রেল।
দক্ষিণ পূর্ব রেল শাখায় এই নতুন রুট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আর এই নতুন রুট হল নন্দীগ্রাম রুট। কাঁথির দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম অবধি রেল রুট তৈরির কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। জানা গেছে, এই এলাকার জমি নিচু হওয়ার কারণে সেখানে বাইরে থেকে মাটি এনে ভরাট করে তবেই রেল ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। এই বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অনিলকুমার মিশ্র বলেন, “১৮.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনের কাজ দ্বিতীয় বার শুরু হয়েছে। দু’টো বড় সেতুর কাজ চলছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে এখানকার নিচু জমি ভরাট করতে গিয়ে। ১৮ লক্ষ কিউবিক মিটার মাটির দরকার, যা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।” এছাড়াও শীঘ্রই এই রুটে কাজ শুরুর বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “তিন জন ঠিকাদারের প্রত্যেকে ৫-৬ হাজার কিউবিক মিটার মাটি সরবরাহ করবেন। ছ’মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ হতে পারে। তার পরে লাইন বসানো শুরু হবে।”