গত সপ্তাহে থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। সেখানের অশান্তি যেন কমছেই না। এই অশান্তির আগুন প্রথম জ্বলে ওঠে গত সপ্তাহে, যখন সন্দেশখালির রাস্তায় শুরু হয় স্থানীয়দের বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভের প্রথম সারিতে দেখা যায় অনেক মহিলাকে। তারা বিক্ষোভ দেখান শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ শিবপ্রসাদ হাজরা ও তার সাগরেদদের বিরুদ্ধে। মহিলারা অভিযোগ করেন জর স্থানীয় এই নেতা এলাকার মহিলাদের তুলে নিয়ে যেত মিটিংয়ে মিছিলে। এমনকি রকান্তে মহিলাদের বাড়িতেও ডাকা হত বলে অভিযোগ করেন মহিলারা। রটে শ্লীলতাহানি ও যৌন হেনস্থার অভিযোগটিও সামনে আসে। এই নিয়ে অশান্তির পারদ আরো অনেকটা চড়ে যায়।
আর এবার এই সন্দেশখালি অশান্তির ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ নুসরত জাহান। সম্প্রতি, বিষয়টি প্রসঙ্গে নুসরত শান্তির আবেদন জানান সন্দেশখালিবাসীর কাছে। নুসরত বলেন, “এই কঠিন পরিস্থিতিতে, লোককে রাগানো বা প্রভাবিত করার থেকে নিজেদের বিরত রাখুন। প্রশাসনকে সাহায্য করুন। রাজ্য সরকার ক্লান্তিহীনভাবে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এই পরিস্থিতিকে রাজনীতির রঙ দেবেন না। আমাদের কাজ আগুন নেভানো, আগুনে ঘি দেওয়া নয়। প্রশাসনকে সাহায্য করুন। তাদের দায়িত্ব পালনে সাহায্য করুন।”
তবে এই ঘটনার আঁচ কিন্তু পৌঁছে গিয়েছে দিল্লি অবধি। সন্দেশখালির ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা শোনা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির মুখেও। দিল্লিতে বিজেপির দফতরে বক্তব্য রাখার সময় স্মৃতি বলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলেরা গুন্ডারা দেখে আসে, কাদের বাড়ির মেয়ে সুন্দরী, কোন মেয়েদের বয়স কম। তাঁদের স্বামীদের বলা হয়েছে, তুমি স্বামী হতে পার, কিন্তু তোমার কোনও অধিকার নেই। মহিলারা বলেছেন, নিয়ে চলে যাবে রাতের পর রাত। যতক্ষণ তাঁদের মন না ভরবে, ততক্ষণ তোমার রেহাই নেই।” তিনি রাজ্যের শাসক দলের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, “আমরা নাগরিক হিসেবে কি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করব? এই ব্যক্তিটি কে, যাঁর বিরুদ্ধে সন্দেশখালির মহিলারা গণধর্ষণের অভিযোগ করছেন? এখনও পর্যন্ত সবাই ভাবছিল, শেখ শাহজাহান কে?”।
যদিও রাজ্য মহিলা কমিশন সন্দেশখালি গিয়ে সেখানে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যে যেখানে খুশি যেতেই পারেন। আমিও রাজ্য মহিলা কমিশনকে পাঠিয়েছিলাম। তারা রিপোর্ট দিয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।’’ এর রাজ্য পুলিশের তরফে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। সেই ঘোষণার পর রাত কাটতে না কাটতেই সন্দেশখালি থানায় হাজির হলেন ডিআইজি সিআইডি সোমা। তাঁর নেতৃত্বের ১০ সদস্যের বিশেষ দল সন্দেশখালি গিয়ে সব অভিযোগের তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে বলে খবর।