মাত্র ১২ বছর বয়সে বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘সেই বালক বয়সে এখানকার প্রকৃতির কাছ থেকেই যে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেম, এখানকার অনবরুদ্ধ আকাশ ও মাটি দূর হতে প্রতিভাত নীলাভ শাল ও তাল শ্রেণীর সমুচ্চ শাখাপুঞ্জে শ্যামলা শান্তি, স্মৃতি-সম্পদরূপে চিরকাল আমার স্বভাবের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে।’ তারপর থেকে একের পর এক ভবন নির্মাণ, ধীরে ধীরে রবি ঠাকুরের হাতে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী হয়ে ওঠা। তবে এসবের পর গত ২০ বছর আগে চালু হওয়া সোনাঝুরির হাট আজ বোলপুরের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই আকর্ষণ এবার অনেকটা ম্লান হতে চলেছে বলে খবর।
দুই দশক আগেই শাল গাছের জঙ্গলের মাঝে অর্থাৎ শান্তিনিকেতনের বনদফতরের জায়গায় এই সোনাঝুরি হাট চালু হয়। কয়েকজন স্থানীয় গ্রামবাসী ও হস্তশিল্পীর উদ্যোগেই এই হাটের পথচলা শুরু হয়। তবে এখন শুক্র থেকে রবি ছাড়াও প্রতিদিনই হাটে ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষ। উইকেন্ডে ভিড় সামাল দিতে তো পুলিশকেই আসতে হয় হাটে। তবে এই হাটের কারণে এবার ক্ষতির মুখে পড়ছে রাঢ় বঙ্গের এই শাল বন। পাশাপাশি অনেক জায়গায় গজিয়ে উঠছে অবৈধ নির্মাণ। এককথায় এই হাটের কারণে প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। আর সেই কারণেই এবার নেওয়া হল এক বড় পদক্ষেপ।
জানা গেছে, পরিবেশপ্রেমীদের এই আর্জিতে সাড়া দিয়েছে প্রশাসন। তাই এবার পিলার ও নেট দিয়ে ঘিরে ফেলে হবে সোনাঝুরি বনকে। আর সেই কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে চলছে চিহ্নিতকরণের কাজ। আর সেই অনুযায়ী বসানো হবে পিলার ও নেট। এই প্রসঙ্গে বীরভূমের জেলার বন দফতরের আধিকারিক দেবাশিস মহিমা প্রসাদ প্রধান বলেন, “সোনাঝুরি হাটকে নিজেদের সীমানায় আয়ত্তের মধ্যে আনতে চলেছে বন দফতর। আমাদের অধীনে থাকা জমি চিহ্নিতকরণ ছাড়াও শীঘ্রই মোট ১২১ কিলোমিটার জঙ্গলে পিলার দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তা ছাড়া সীমানা সুরক্ষিত করতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।”
আর বন দফতরের নেওয়া এই পদক্ষেপের কারণেই হাটে ব্যবসা করে অন্নসংস্থান করা ক্ষুদ্র শিল্পীদের মাথায় হাত পড়েছে। এবার বন্ধের মুখে তাদের রোজগার। এই বিষয়ে সোনাঝুরির হাট কমিটির সম্পাদক তন্ময় মিত্র বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় হস্তশিল্পী, কুটিরশিল্পী ও আদিবাসীশিল্পীরা বিকিকিনি উদ্দেশেই জঙ্গলের মধ্যে হাটে বসেন। হাটকে কেন্দ্র করে শান্তিনিকেতন সংলগ্ন স্থানীয় মহিলারা আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। বনদফতর জঙ্গলের সীমানা দিতেই পারে। রুটি রুজির প্রশ্নে হাটে বসা প্রায় ১৭০০ শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি না পড়লেই হল।”