বছরের পর বছর ধরে বেআইনি নির্মাণ হওয়ার ফলেই কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত গার্ডেনরিচের ঘিঞ্জি এলাকায় গড়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। তার আশেপাশে অজস্র বসতি রয়েছে। আর এমনই এক বহুতল ভেঙে বিপর্যয় ঘটেছে গার্ডেনরিচের ফতেপুর ব্যানার্জি বাগান লেনে। রবিবার মাঝরাতে এখানে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে। শক্ত কংক্রিটের চাঁই আশেপাশের বস্তির টালির ছাদে ভেঙে পড়ে। আর এই ঘটনায় এখনো অবধি ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। NDRF, পুলিশ, দমকল সকলে মিলে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালায়। রাতভর সেখানে দাঁড়িয়ে উদ্ধারকাজের তদারকি করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সোমবার সকালেই দুর্ঘটনাস্থলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু এই দুর্ঘটনার খবর রাতারাতি যেন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। একইভাবে এমন বিপর্যয়ের নেপথ্যে ছিলেন কারা, সেই নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। আর এর মাঝেই উঠে এল এই বহুতল নির্মাণের নেপথ্যে থাকা প্রমোটারের নাম। এই বিপর্যয়ের আট ঘণ্টা পর সোমবার ওই প্রমোটারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর সেই প্রমোটারের খাতা খুলতেই পুলিশের হাতে উঠে আসে একের পর এক চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। আসুন, জেনে নিই এই বহুতলের প্রমোটার আদতে কে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গার্ডেনরিচে যে বহুতল ভেঙে বিপর্যয় ঘটেছে, তার প্রমোটার ছিলেন মহম্মদ ওয়াসিম নামের এক ব্যক্তি। যদিও ওয়াসি নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন এলাকায়। তবে এর আগেও লাল কালির দাগ পড়েছে ওয়াসির নামে। জানা গেছে, বড়বাজার থানা এলাকায় একটি ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছিলেন এই ওয়াসি। সেই কারণে টানা নয় বছর জেলে ছিলেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই দালালি শুরু করেন ওয়াসি। আর সেই জমির দালালি থেকেই বছর চারেক আগে প্রমোটিংয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। জানা গেছে, এখনো অবধি তিনটি প্রকল্পে প্রমোটিংয়ের কাজ করেছেন ওয়াসি।
এখন প্রশ্ন উঠছে যে এই এলাকায় এমন বহুতল নির্মাণ হল কিভাবে। এখানেই আবার উঠে আসছে কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নং ওয়ার্ডের পুর প্রশাসক শামস ইকবালের নাম। ইকবালের সঙ্গেই নাকি যোগাযোগ ছিল অভিযুক্ত প্রমোটার ওয়াসির। এই অভিযোগ তুলে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “কাউন্সিলরের সঙ্গে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওয়াসিমকে দেখা যেত। কাউন্সিলরের মদত ছাড়া ভূরি ভূরি বেআইনি বাড়ি নির্মাণে ছাড়পত্র মেলা অসম্ভব। তা ছাড়া, অন্য কয়েক জন তৃণমূল নেতার সঙ্গেও ওয়াসিমের ওঠাবসা ছিল।” যদিও বেআইনি বহুতল নির্মাণের সঙ্গে কাউন্সিলরদের যোগাযোগের অভিযোগকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কোথায় কত বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তা স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের জানা অসম্ভব।”