কথায় আছে, ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’। তার কারণ হল এই স্থানে পৌঁছানোর কঠিনতা। সাগর দ্বীপের দক্ষিণে যেখানে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে, সেই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ। তাই প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন। তবে বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশা থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ই হয় সর্বাধিক। জীবনে অন্তত একবার এই তীর্থে আসেন উত্তর ভারতের প্রায় সব রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ।
প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির আগে থেকেই পুণ্যার্থীরা ভিড় জমাতে শুরু করেন হাওড়া স্টেশনে। কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই মেলায় আসার জন্য হাওড়া স্টেশনে নামতে হয় সকলকে। আর সেখান থেকে ডায়মন্ডহারবার হয়ে পৌঁছাতে হয়ে দেশের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলায়। লাখ লাখ পুণ্যার্থীদের ভিড় সামাল দিতে প্রতি বছর মেলার আগে থেকেই তাদের নিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থা সুচারু করে তুলতে নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। কিন্তু এই মেলায় পৌঁছানোর জন্য প্রধান যে সমস্যা, তা হল মুড়িগঙ্গা নদী পারাপার। একইসঙ্গে এই সাগর এলাকার মানুষের কাছেও এটি একটি জ্বলন্ত সমস্যা। তবে এবার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন লাখ লাখ মানুষ।
এবার চালু হচ্ছে এমন এক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে একফিকে যেমন সহজেই পৌঁছানো যাবে কপিল মুনির আশ্রমে, অন্যদিকে সাগর এলাকার মানুষের জীবনও হবে অনেকটা সহজ। কারণ এবারের বাজেটে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। আর এই সেতু নির্মাণ হলে একাধিক লাভ হবে এই এলাকায়। কারণ এই সেতুর জন্য গঙ্গাসাগরের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা বদলে যাবে জাতীয় সড়কে। আর এমনটা হলে কপিলমুনি আশ্রম থেকে মূল ভূখণ্ডের কাকদ্বীপের কাশীনগর মিশে যাবে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে।
কিন্তু কিভাবে এই সেতু নির্মাণের টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। বাজেটের পর এই বিষয়টি নিয়েও খোলাখুলি জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গেছে, নাবার্ডের সহযোগিতায় এই সেতু নির্মাণ হবে। আর এই সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা খরচ করা হবে রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের থেকে। জানা গেছে, এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজন পড়বে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এতদিন সেই টাকার জোগাড় করতে পারেনি রাজ্য। এমনকি কেন্দ্রের তরফেও কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। তবে এবার নাবার্ডের সাহায্যে তা সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে রাজ্য সরকার সূত্রে।