শহর কলকাতার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন দেখা যায় কলকাতার পাতালরেলে। শহরের নীচে এ এক এক দুর্দান্ত পরিবহন ব্যবস্থা। কারণ মহানগরীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নির্দ্বিধায় কোনোরূপ ট্র্যাফিক জ্যাম ছাড়াই যাত্রীদের পৌঁছে দেয় এই পাতালরেল। বিগত এক দশকে শহরের একাধিক রুটে মেট্রো চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে ব্যস্ততম শহর কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসতে চলেছে আমূল পরিবর্তন। আর এই মেট্রো পরিষেবার বিস্তৃতি রয়েছে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন থেকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন অবধি। অর্থাৎ, কলকাতার এপার ও ওপারকে জুড়ে দিয়েছে মেট্রো পরিষেবা।
তবে কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো চলে খুবই কম। বেশিরভাগ ট্রেনের রুট শেষ হয়ে যায় দমদম স্টেশনেই। যেখানে কবি সুভাষ থেকে দমদম পর্যন্ত ২৮৮টি মেট্রো চলে, সেখানে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত চলে মাত্র ১৭৮টি ট্রেনই। আর এর কারণ হল দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে লাইনের কমতি। যে কারণে এই স্টেশনে ঢোকার আগে লাইন বদল করতে হয় ট্রেনকে। আর এই সমস্যা দূর করতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিষয়ে রাজ্যের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। আর এই প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহনের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণেশ্বরের স্কাই-ওয়াকের একাংশ ভেঙে ফেলা।
আর মেট্রোরেলের এই প্রস্তাবে এবার চরম ক্ষুব্ধ হল রাজ্য সরকার। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি নিয়ে মেট্রোর প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন। এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারকে ‘তুঘলকি’ তকমা দিতেও ছাড়েন নি তিনি। মন্ত্রী বলেন, “মেট্রোর কাছ থেকে কাজ করার জন্য নো-অবজেকশন নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোথায়, কী আছে। সেই নক্সার সঙ্গে আমাদের নক্সা মিলিয়ে বিপুল টাকা খরচ করে ওটা তৈরি করা হয়েছে। এখন বলছে স্কাইওয়াক ভেঙে দাও। আমাদের একটা সৃষ্টি, সেটা ভেঙে দেব?” তিনি এই বিষয়ে আরো বলেন, “আগে বললে আমরা সেই ভাবেই কাজ করতাম। আর এখন ওখানে জায়গা নেই। কাজ করলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। মেট্রো যা প্ল্যান দিয়েছে তাতে দক্ষিণশ্বের রাস্তায় ঢোকা যাবে না। রামকৃষ্ণের একটা ঐতিহ্য সেটা নষ্ট করে দেব?”
উল্লেখ্য, শুক্রবার এই মর্মে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক হয় রাজ্য সরকারের। আর এই বৈঠক শেষে এই প্রস্তাবের বিষয়ে কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি বলেন, “দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মকে আরও ৯০ মিটার বাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। স্টেশনটি এলিভেটেড হওয়ার জন্য আমাদের পিলার বসিয়ে তার উপর প্ল্যাটফর্মের সম্প্রসারণ করতে হবে। তবে তার জন্য আমাদের কিছুটা জমি লাগবে। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে সেই জমি চেয়ে আবেদন করেছি।” কিন্ত তখন এক বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়, সেটাই দেখার।