হাতেগোনা আর কয়েকটি মাস, তারপরেই দিল্লির মসনদ দখলের মহারণ শুরু হবে ভারতে। ২০২৪ সালেই লোকসভা ভোট রয়েছে দেশে। আর এই ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সব বিরোধী দলগুলি। যেহেতু দেশের প্রধান বিরোধী দলের তকমা হারিয়েছে কংগ্রেস, তাই এখন কংগ্রেসকে অন্যান্য রাজ্যস্তরের দলগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে হবে। এটা আগেভাগে বুঝে ২৮ টি দলকে নিয়ে তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়া’ জোট। এই জোটের নামকরণ নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক হয়। তবে এই বিতর্ক বাড়ে জোটের অন্দরে থাকা দলগুলির মতবিরোধের বাড়বাড়ন্তর কারণে।
সম্প্রতি, জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক সমস্যা। কয়েকদিন আগেই রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার বিষয়ে সৌজন্যতার অভাবের কারণে দেখিয়ে জোট থেকে হাত তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টিও যে কংগ্রেসের হাত ধরতে নারাজ, তাও কয়েকদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছে দল। আর এদিকে নীতিশ কুমারও বিজেপির সঙ্গে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এইসব মিলিয়ে এখন টালমাটাল অবস্থা ইন্ডিয়া জোটের। আর এর মাঝেই আরো বিপদে জোটের ভবিষ্যৎ। কারণ এবার বিজেডি’ও বিজেপির হাত ধরার ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি, ওড়িশায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও বিজেডি সুপ্রিমো নবীন পট্টনায়কের বন্দনা করতে শোনা গেছে। শনিবার ওড়িশার সম্বলপুরে অবস্থিত আইআইএম-এ এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। সেখানেই মোদি তাকে ‘মিত্র’ সম্বোধন করেছেন সেখানে গিয়ে। অন্যদিকে পাল্টা বিজেডি প্রধানও মোদিকে ফিরুয়ে দিয়েছেন তার সম্বোধন। পট্টনায়ক বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দেশে নতুন দিশায় এগিয়ে চলেছে। আমরা অর্থনৈতিক পাওয়ারহাউজে পরিণত হচ্ছি।” আর উভয়পক্ষের এই গুনগানের পর তাদের রসায়ন নিয়ে উঠছে নানা জল্পনা।
উল্লেখ্য, কয়েকদশক আগে নবীনের বাবা বিজু পট্টনায়েক জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তবে সময়ের ফেরে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তার। তারপর দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন জনতা দলে। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৯৭ সালে নবীন পট্টনায়েক গঠন করেছিলেন বিজু জনতা দল বা বিজেডি। তারপর থেকেই বিজেপি ঘনিষ্ঠ হয় বিজেডি দল। নবীন পট্টনায়েক ২০০০ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০০৯ সালে বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছিলেন নবীন। এরপর থেকে একক দল হিসেবে ওড়িশার ক্ষমতায় ছিল নবীন পট্টনায়কের দল। কিন্তু এই লোকসভা ভোটের আগে ফের মোদির সঙ্গে তার কাছাকাছি আসাকে অনেকেই তাদের জোট বাঁধার ইঙ্গিত বলে দেখছেন। যদিও দুই দলের তরফে এখনো কিছু তেমন ঘোষণা হয়নি।