বাংলার বুকে বাম বিরোধী রাজনীতি করার সাহসটা তিনিই দেখিয়েছিলেন। একের পর এক বাম দূর্গ ভেঙে সেখানে ফুটিয়েছেন নিজের স্নেহের ঘাসফুল। ইনি আর কেউ নন, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার রাজনীতিতে মহিলা হিসেবে প্রথমবার একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী পদে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। বাংলার মানুষকে ভরসা দিয়েছেন তিনি। ক্ষমতা নয়, ভালোবাসা দিয়েই রাজ্য চালান তিনি। অনেকেই মনে করেন, রাজনীতির ময়দানে মমতা তৈরি করেছেন নিজস্ব স্টাইল। শূন্য থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্র্যান্ড মমতাকে। এবার জাতীয় রাজনীতিতেও ব্র্যান্ড মমতার উত্থান ঘটেছে।
সালটা ১৯৯৮। কালীঘাটে আদিগঙ্গাপারের মেয়েটি ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন রাজ্যের বাম বিরোধী মানুষের মূল ভরসা। কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়লেন ওই বছরেই। তারপর ধীরে ধীরে জননেত্রী হয়ে ওঠেন মমতা। আর সেখান থেকেই বাম শাসনের কোমর ভেঙে দিতে গড়ে তোলেন সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলন। অবশেষে আসে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোট। সেই বছরই শেষ হয়ে যায় ৩৪ বছরের বাম সরকারের ইনিংস শেষ। মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইভাবে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটেও দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গড়ে মমতার স্বপ্নের তৃণমূল। ২০২১ সালের ভোটে মানুষ আস্থা রেখেছেন ঘরের মেয়ের উপরেই। এই বছর তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে মমতার দল তৃণমূল।
কিন্তু রাজনীতির বাইরে মানুষ হিসেবেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক লড়াকু মেয়ের পরিচয় দিয়ে আসছেন। কারণ একটা সময় পারিবারিক অর্থাভাব দূর করতে স্কুলে শিক্ষকতা করতে হয়েছিল মমতাকে। জানা যায়, তার বাবা মারা যাওয়ার পরেই তাদের সংসারে মাথা তুলে দাঁড়ায় অর্থকষ্ট। তাই জীবনের লড়াইয়ে শিক্ষকতা পেশাকেই বেছে নিয়েছিলেন মমতা। তখন তিনি নিনেও ছাত্রী। কিন্তু তারপরেও চাকরিতে যোগদান করেন মমতা। জানা যায়, মন্মথনাথ নন্দন গার্লস অ্যান্ড বয়েজ প্রাইমারি স্কুল-এ তিনি শিক্ষকতার চাকরি করতেন। তাই এখনও এই স্কুলের পাশ দিয়ে পেরিয়ে গেলে নস্টালজিক হয়ে পড়েন মমতা।
যদিও এখন এই স্কুলের একটি নতুন বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে। সোমবার এই বিল্ডিংয়ের উদ্বোধন হয়। কিন্তু তখন স্কুলটির নাম এক নেই। স্কুলের মর্নিং সেকশনের নাম হয়েছে ‘নন্দন প্রাইমারি’। তবে ডে-স্কুলের নাম হয়েছে ‘ভবানীপুর মডার্ন স্কুল’।মাধ্যমিক অবধি পঠনপাঠন হয় এই স্কুলে। তাই স্কুলের বিল্ডিংয়ের উদ্বোধন করে মমতা নস্টালজিক হয়ে বলেন, “আমি যখন এই স্কুলে পড়াতাম, তখন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী ছিলাম। বাবা মারা গিয়েছেন। টানাটানি ছিল। হাতখরচের জন্য করতাম। আমার সঙ্গে ছাত্রদের বয়সের ফারাক খুব বেশি ছিল না– ওই পাঁচ-ছয় বছরের মতো। আজ অনেকের কথাই মনে পড়ছে। একটা স্মৃতি তো থাকেই। মনে পড়ছে, হরিশ চ্যাটার্জী দিয়ে ঢুকে আমি হেঁটে হেঁটে এই স্কুলে আসতাম।”