হাতেগোনা আর কয়েকটি মাস, তারপরেই দিল্লির মসনদ দখলের মহারণ শুরু হবে ভারতে। ২০২৪ সালেই লোকসভা ভোট হওয়ার কথা রয়েছে দেশে। আর এই ভোটে বর্তমানের শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরের গেম-প্ল্যান কিন্তু অনেকটাই আলাদা। একদিকে যেমন শাসক দল বিজেপি আসন্ন এই লোকসভা ভোটে ফের ৩০০-র বেশি আসন পেয়ে বিরোধীদের কার্যত ‘হোয়াইট-ওয়াশ’ করতে মরিয়া, অন্যদিকে বিরোধীরা ফের একবার ঘুরে দাঁড়িয়ে পদ্ম শিবিরকে টেক্কা দেওয়ার ছক কষতে কোমর বাঁধছে। আর বিরোধীদের এই ইলেকশন রুট-ম্যাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জোটের ভবিষ্যৎ। আর এই বিষয়টি নিয়ে এবার তৈরি হল টালমাটাল পরিস্থিতি।
২০২৩ সালে বিজেপি বিরোধী সব দলগুলি একত্রিত হয় লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। যেহেতু দেশের প্রধান বিরোধী দলের তকমা হারিয়েছে কংগ্রেস, তাই এখন কংগ্রেসকে অন্যান্য রাজ্যস্তরের দলগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে হবে। এটা আগেভাগে বুঝে ২৬ টি দলকে নিয়ে তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়া’ জোট। এই জোটের নামকরণ নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক হয়। তবে এই বিতর্ক বাড়ে জোটের অন্দরে থাকা দলগুলির মতবিরোধের বাড়বাড়ন্তর কারণে। আর এবার জোটের মূল শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে করলেন এক বড় মন্তব্য।
গত সোমবার সংহতি যাত্রা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জোট নিয়ে অসন্তোষের শব্দাবলী প্রকাশ করেন। তবে এবার তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন এক চলার নীতি। কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়া যাত্রা’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মমতা বলেন, “জোটের শরিক হিসেবে সৌজন্যের খাতিরেও তো জানাতে পারত, দিদি আপনার রাজ্যে যাচ্ছি। না জানায়নি।” আর সেই সঙ্গে তৃণমূলের একলা চলো নীতিকেও স্পষ্ট করেন তিনি। তৃণমূল সুপ্রিমো এই বিষয়ে বলেন, “যে দিন থেকে আমাদের সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, সে দিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা একা লড়ব। আমাদের সঙ্গে বাংলার ব্যাপারে কোনও সম্পর্ক নেই। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কী করব, না করব সে ব্যাপারে ভোটের পর সিদ্ধান্ত নেব। আমরা নিরপেক্ষ দল। আমরা বিজেপিকে হারানোর জন্য যা করার করব।”
আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহলে। এবার সুর নরম করতেও দেখা গেছে কংগ্রেজ নেতৃত্বকে। এই মর্মে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, “রাহুল গান্ধী আগেই বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ। মমতাজি অনেক বড় নেত্রী, অনেক সম্মানীয় রাজনীতি। ওনার থেকে প্রেরণা পাই আমরা। মমতাজিকে ছাড়া ইন্ডিয়া জোটের কল্পনাই করা যায় না। কখনও কখনও মতবিরোধ হয়। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বেরোবে।” তবে এসবের মাঝেও জোটের ভবিষ্যৎ বিশ বাঁও জলে।