২০২৩-এ তৃণমূলের এক মেগা ইভেন্টে গোটা বাংলার নজর পড়েন এক ছাপোষা তরুণী। ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চে ঝাঁঝালো বক্তৃতা দিয়ে সকলের নজরে পড়েন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেত্রী রাজন্যা হালদার। শাসকদলের ছাত্র সংগঠনে রাতারাতি উল্কা গতিতে উত্থান হয় রাজন্যার। একাধিক সাংগঠনিক দায়িত্ব তাঁর কাঁধে তুলে দেয় তৃণমূল নেতৃত্ব। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্ত জমিতে ‘ঘাসফুল’ ফোটানোর কঠিন দায়িত্ব রাজন্যার কাঁধে তুলে দেয় তৃণমূল। তা তিনি পালন করছেন রীতিমতো।
এর মাঝেই পরিচালক তথা নিজের হবু বর প্রান্তিক চক্রবর্তীর ‘১৯৪৫ : বিহাইন্ড দ্য মাউন্টেনস’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রাজন্যা। প্রজাতন্ত্র দিবসে মুক্তি পেয়েছে এই সিনেমা। কলকাতার নন্দন, নজরুল তীর্থ-এর মতো সরকারি প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি আইনক্সেও মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। স্বাধীনতা সংগ্রামী পুতলি তামাংয়ের জীবন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি হচ্ছে সিনেমাটি। এই সিনেমায় পুতলির ভূমিকাতে দেখা গেছে রাজন্যাকে। রাজন্যার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ঋতব্রত ভট্টাচার্য, রিয়া ভুজেল, মণিকুমার ভুজেলরা।
সোনারপুরের বাসিন্দা রাজন্যা হালদার ছিলেন প্রেসিডেন্সির একজন পড়ুয়া। প্রেসিডেন্সি থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি পিএইচডি করছেন। রাজন্যার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে পা রাখা হলো ২০১৭ সালে। পড়াশোনার পাশাপাশি এই মুহূর্তে রাজন্যা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল ছাত্র যুব সংগঠনের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন। এই রাজন্যা হঠাৎ করেই রাজনীতিতে যোগ দেননি। বরং তিনি রাজনৈতিক পরিবেশ থেকেই উঠে আসা একজন যুবতী। কারণ, রাজন্যার দাদু এবং বাবা দুজনেই ছিলেন কংগ্রেস নেতা। তার বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র নির্বাচনে তিনি দুবার জয়ী হন নির্দল প্রার্থী হিসেবে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক মতাদর্শ বদলায় এবং তারপর তৃণমূলে যোগ দেওয়া। তার হাত ধরেই প্রেসিডেন্সিতে গড়ে ওঠে ছাত্র পরিষদের সংগঠন এবং তখন থেকেই তিনি আলাদাভাবে পরিচিতি লাভ করেন।
এছাড়াও রাজন্যা খুব ভালো গান করেন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি জয়ী ব্যান্ডের অন্য একজন সদস্যা তিনি। এসবের মধ্য দিয়েই রাজন্যা হালদার তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং এই বছর একুশে জুলাই মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। একুশে জুলাইয়ের মতো মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেতেই এতোটুকু সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। তার ঝাঁঝালো বক্তব্যে শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে মঞ্চের সামনে বসে থাকা কর্মী সমর্থকরা হাততালি দিতে ভোলেননি। আর সেই কারণেই হয়তো এবার যাদবপুরের সেনাপতি তিনিই হচ্ছেন। কারণ, যাদবপুরের ‘মুক্তমনা’ মাটি দখলে রাজন্যার উপর আস্থা রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ছাত্র সংগঠন। নতুন ইউনিটে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই যুব তৃণমূল নেত্রীকে।