সোমবার অভিজিৎ মুহূর্তে অপেক্ষার অবসান ঘটল। দীর্ঘ আন্দোলন, দাঙ্গা, আইনি জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে অযোধ্যার মাটিতে প্রতিষ্ঠা করা হল ভগবান রামকে। ঠিক যেন ইতিহাসের উল্টো কথা লেখা হল ২০২৪-এর শুরুতেই। সোমবার বেলা ১২ টা ব্রজে ২৯ মিনিটের মাহেন্দ্রক্ষণে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি নিজেও রাম মন্দির আন্দোলনের অন্যতম শরিক ছিলেন। এদিন পুণ্যস্নানের পরেই গর্ভগৃহে রাজবেশে সাজানো হয় রামলালা মূর্তিকে। তারপর শাস্ত্রমতে অর্ঘ্য দানের মাধ্যমে মূর্তিতে প্রানের প্রতিষ্ঠা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠান ছিল তারকাখচিত। তাই আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ তকমা দিচ্ছেন অনেকেই।
সোমবার রামলালার মূর্তিকে এক অনন্য সাজে সাজানো হয়। নানারকম ফুল ও গয়না দিয়ে সাজানো হয় মূর্তিকে। এই মূর্তি থেকে বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার আভাস স্পষ্টভাবে দেখা যায়। যা প্রথম দর্শনেই রাম ভক্তদের আকৃষ্ট করে। ভগবান রামের কপালে লাগানো তিলক সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য দেখায়। মূর্তিটিতে সূর্য, ওম, গণেশ, চক্র, শঙ্খ, গদা, স্বস্তিক এবং হনুমানের মূর্তি রয়েছে। ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ রামলালার এই মূর্তিটিকে দিব্য করে তুলেছেন। কিন্তু এই মূর্তি উত্তরভারতের অন্যান্য সব রামের মূর্তির থেকে কিছুটা আলাদা। অনেকটা দক্ষিণ ভারতের মতো রূপদান করা হয়েছে রামলালার ভব্য মূর্তিকে। মূর্তির রং কালো। কিন্তু কেন এমনটা? তা এবার জেনে নিন।
রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে উপস্থিত রামলালার মূর্তির অনেক গুণ রয়েছে। এটি মূলত কষ্টিপাথর বা শ্যাম শিলা দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। এই শিলার বয়স হাজার বছর। এটি জল প্রতিরোধী। অর্থাৎ, জল ও দুধে স্নান করানো হলেও মূর্তির কোনো ক্ষতি হবেনা। একইসঙ্গে সেই স্নান জল খাওয়া হলে, তাও কোনো ক্ষতি করবে না। পা থেকে কপাল পর্যন্ত মূর্তির মোট উচ্চতা ৫১ ইঞ্চি। প্রতিমার ওজন প্রায় ২০০ কেজি। মূর্তির উপরে একটি মুকুট শোভা পাচ্ছে। রামের হাত হাঁটু পর্যন্ত লম্বা। চোখ দুটো বড়। কপাল বড় বড়। মূর্তিটি পদ্ম পুকুরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। রামলালার হাতে তীর-ধনুক। যেন বছর পাঁচেকের শিশুসদৃশ কোমলতা ফুটে উঠেছে রামলালার এই দিব্য রূপে।
তবে এই মূর্তির আরো বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন, এই বিগ্রহে একসাথে রোলহ হয়েছে ভগবান বিষ্ণুর ১০টি অবতারকে। মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি অবতার রয়েছে রামলালার মূর্তির চারপাশে। এছাড়াও মূর্তিটিতে হনুমান ও গরুড়ের মূর্তিও রয়েছে। রামলালার পাদদেশে স্থান দেওয়া হয়েছে তার সবথেকে বড় দুই ভক্তকে। উল্লেখ্য, তিনটি মূর্তির মধ্যে থেকে শিল্পী অরুণ যোগীরাজের এই মুর্তিটিকে বেছে নেওয়া হয় রাম মন্দিরের জন্য।