সোমবার অভিজিৎ মুহূর্তে ৫০০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। দীর্ঘ আন্দোলন, দাঙ্গা, আইনি জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে অযোধ্যার মাটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভগবান রামকে। এদিন বেলা ১২ টা ব্রজে ২৯ মিনিটের মাহেন্দ্রক্ষণে মন্দিরের প্রধান যজমান হিসেবে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন পুণ্যস্নানের পরেই গর্ভগৃহে রাজবেশে সাজানো হয় রামলালা মূর্তিকে। তারপর শাস্ত্রমতে অর্ঘ্য দানের মাধ্যমে মূর্তিতে প্রানের প্রতিষ্ঠা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠান ছিল তারকাখচিত। তাই আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ তকমা দিচ্ছেন অনেকেই।
ওইদিন প্রাণ প্রতিষ্ঠার মুহূর্তে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংস্থার প্রধান মোহন ভগবত, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং মন্দিরের প্রধান পূজারী অরুণ দীক্ষিত। তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণ প্রতিষ্ঠার মন্ত্রপাঠ করান। তিনি এবার রামলালার এক অন্য নাম রাখলেন। সম্প্রতি, সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া রক সাক্ষাৎকারে অরুণ দীক্ষিত জানান, রামলালাকে এবার ‘বালক রাম’ নামে ডাকা হবে। যেহেতু রামলালার মূর্তিতে বছর পাঁচেকের শিশু রামের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সেই কারণেই তিনি প্রভু রামকে এই নামে ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার রামলালার মূর্তিকে এক অনন্য সাজে সাজানো হয়। হলুদ বেনারসি ধুতি, লাল পটবস্ত্র, নানারকম ফুল ও গয়না দিয়ে সাজবেশে সাজানো হয় মূর্তিকে। ভগবান রামের কপালে লাগানো তিলক সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য দেখায়। মূর্তিটিতে সূর্য, ওম, গণেশ, চক্র, শঙ্খ, গদা, স্বস্তিক এবং হনুমানের মূর্তি রয়েছে। ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ রামলালার এই মূর্তিটিকে দিব্য করে তুলেছেন। কিন্তু এই মূর্তি উত্তরভারতের অন্যান্য সব রামের মূর্তির থেকে কিছুটা আলাদা। অনেকটা দক্ষিণ ভারতের মতো রূপদান করা হয়েছে রামলালার ভব্য মূর্তিকে। এই মূর্তি দেখেই পুরোহিত অরুণ দীক্ষিতের চোখে জল আসে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে উপস্থিত রামলালার মূর্তির অনেক গুণ রয়েছে। এটি মূলত প্রাচীন কষ্টিপাথর বা শ্যাম শিলা দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। এটি জল প্রতিরোধী। অর্থাৎ, জল ও দুধে স্নান করানো হলেও মূর্তির কোনো ক্ষতি হবেনা। একইসঙ্গে সেই স্নান জল খাওয়া হলে, তাও কোনো ক্ষতি করবে না। পা থেকে কপাল পর্যন্ত মূর্তির মোট উচ্চতা ৫১ ইঞ্চি। প্রতিমার ওজন প্রায় ২০০ কেজি। মূর্তির উপরে একটি মুকুট শোভা পাচ্ছে। রামের হাত হাঁটু পর্যন্ত লম্বা। চোখ দুটো বড়। কপাল বড় বড়। মূর্তিটি পদ্ম পুকুরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। রামলালার হাতে তীর-ধনুক। যেন বছর পাঁচেকের শিশুসদৃশ কোমলতা ফুটে উঠেছে রামলালার এই দিব্য রূপে।