ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান হল ‘ভারতরত্ন’। তারপর জাতীয় স্তরের অন্যতম সম্মান হল পদ্ম পুরস্কার। এই পুরস্কারকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান বলে ধরা হয়। মূলত তিনটি বিভাগে দেওয়া হয় এই সম্মান। আর সেগুলি হল পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী। ভারত সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্ম পুরস্কার দেওয়া শুরু করেছিল। তবে পরের বছর অর্থাৎ, ১৯৫৫ সালে এই সম্মানের তিনটি স্তর ভাগ হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। আর এবার এই পুরস্কারে ভূষিত হবেন রাজ্যের একঝাঁক সম্মানীয় ব্যক্তি। দেশের প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই এই তালিকা ঘোষণা করা হয়।
২০২৪-এর পদ্ম সম্মান প্রাপকদের মধ্যে যেমন রয়েছেন পুরুলিয়ার পরিবেশ প্রেমী দুখু মাঝি, তেমনই এই তালিকায় নাম রয়েছে বীরভূমের লোকগানের শিল্পী রতন কাহারের। মূলত টুসু ও ঝুমুর ঘরানার গান লিখে, তাতে সুর দিয়ে এবং তা গেয়েছেন এই লোকশিল্পী। তবে তাকে নামে সবাই না চিনলেও, তার কাজ কমবেশি সকলের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেছে। কটন তার লেখা ও সুর দেওয়া ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটি শোনেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়। আসমুদ্র হিমাচলে এই গানকে পৌঁছে দিয়েছেন র্যাপ শিল্পী বাদশা। যদিও শুরুতে শিল্পীকে সম্মান দেননি তিনি তবে পরে তাকে সাম্মানিক দিকে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন এই বিখ্যাত গায়ক।
আর এবার পদ্ম সম্মান প্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে এই প্রথিতযশা শিল্পীর নাম। বাংলা লোকগানের জগতে তার অসামান্য অবদানের জন্যই তাকে এই বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে। বীরভূমের সিউড়ির নগরী পাড়ার রতন কাহার এখনো অবধি আড়াইশোর বেশি লোকগান লিখে, তাতে সুর দিয়ে, সেগুলিকে গেয়েছেন। তাই এই সম্মান পাওয়ার খবর শুনে শিল্পী আজ খুশি হলেও তার কথায় ধরা দিয়েছে অভিমানের আঁচ। এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিল্পী বলেন, “আমার খুব ভালোলাগছে। সবাই আমায় এত ফোন করছে, খুব ভালোলাগছে। এর মতো ভালো আর কী হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছু না দিলেও, ভারত সরকার আমায় এভাবে সম্মানিত করেছে, এর জন্য আমি খুবই গর্বিত। আমার জীবন ধন্য। আমার অনেক গান আছে।”
উল্লেখ্য, ছোট থেকেই লোকগানের প্রতি টান ছিল রতন কাহারের। তাই বীরভূমের লালমাটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে বাঁচতে যে কখন লোকগানের মাধ্যমে জীবনের সুর বাঁধা হয়ে গেছে, তা শিল্পী নিজেও জানেন না। জানা যায়, ১৯৭২ সালে শিল্পীর প্রথম গান রেকর্ড হয় রেডিওতে। সেই বছরই রেডিওতে শোনা যায় তার গান। আর সেই গান গেয়ে তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন মাত্র ৭৭ টাকা ১৫ পয়সা। তবে শিল্পকর্মের থেকে এই উপার্জন নিয়েও কখনো আক্ষেপ করেননি এই মাটির মানুষটি।