শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জেরবার পশ্চিমবঙ্গ। বিগত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে ইথে এসেছে নানা তথ্য। এদিকে টেট পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়েও চরম প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের। অন্যদিকে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের দায়ভার গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এরপর ২০২২ সালের ২২ শে জুলাই তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সেখানে তাকে জেরার মাধ্যমে অর্পিতার সূত্র পায় তারা। অর্পিতার ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকার সন্ধান পান গোয়েন্দারা। সেখান থেকে নগদ ২১ কোটি টাকা উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। সেই টাকা উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। গ্রেপ্তার করা হয় অর্পিতাকেও।
এই নিয়ে রাজ্যের শাসক দল কার্যত বিপাকে পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে। একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে তদন্ত- ঠিক যেন একজোড়া কাঁটা বিঁধে রয়েছে সরকারের গলায়। আর এবার যা ঘটল, তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেল রাজ্যে। এবার টেট পরীক্ষার ওএমআর শিট পাওয়া গেল ঠোঙা হিসেবে। কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার চাকরি প্রার্থীদের পরীক্ষার এই ওএমআর শিট পাওয়া গেল বর্ধমানে। সেই ওএমআর শিট থেকে বানানো হয়েছে ঠোঙা। আর সেই ঠোঙা দিব্যি চলছে বর্ধমানের বাজারে। ঠোঙা খুলতেই চোখে পড়ছে ওএমআর শিট।
জানা গেছে, ঠোঙা হিসেবে বাজারে উপলব্ধ এই ওএমআর শিটগুলি আসলে ২০১২ সালের টেট পরীক্ষার। সেরকমই একটি ওএমআর শিটে যে রোল নম্বর লেখা রয়েছে, তা হল ১১০৫২৩০০। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এই ওএমআর শিটে যিনি টেট পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তার নাম স্বপন বেরা। তবে এই তালিকা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বলা চলে, এই তালিকার সূত্রপাত এখানে। কারণ আরো যাদের এরকম ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে, খোঁজ নিয়ে তাদের নামও সামনে এসেছে। তারা হলেন সুরজিৎ দে, শেখ সেলিম আহমেদ, মিলি বেহেরা, শত্রুঘ্ন দাসের মতো অনেক পরীক্ষার্থী। সূত্রের খবর, এখনো অবধি এরকম ১০০-টিরও বেশি ওএমআর শিট দোকানে দোকানে ঠোঙা হয়ে ঘুরছে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল মুখ খোলেনি। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি তথা মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য এই বিষয়টি নিয়ে বলেন, “এই বিষয়ে যদি কোনও তথ্য আমরা পাই ভালো হবে, আমরা যথাযথ জায়গায় পাঠাবো ও তাদের সাহায্য নেব। আমাদের দিক থেকে সব রকমের সহযোগিতা থাকবে এবং এটা উদ্ধারে চেষ্টা করে যদি কিছু তথ্য বের করা যায় তাহলে খুবই ভালো হবে।” কিন্তু যাদের স্বপ্নের ওএমআর শিট এভাবে ঠোঙা হয়ে হয়েছে, তাদের স্বপ্নভঙ্গের দায় কে নেবে? রাজ্য সরকার নাকি শিক্ষা পর্ষদ!