দীর্ঘ পাঁচ শতাব্দী পর ফের রাম জন্মভূমি অযোধ্যার বুকে প্রতিষ্ঠিত হলেন ভগবান শ্রী রাম। সোমবার অভিজিৎ মুহূর্তে ভগবান রামের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন বেলা ১২ টা বেজে ২৯ মিনিটে বিশেষ মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে উদ্বোধন হয় রাম মন্দিরের। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল, আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত সহ দেশের নানা প্রান্তের সাধু সন্তরা। এছাড়াও দেশের অনেক শিল্পপতি, খেলোয়াড় ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অযোধ্যার পুণ্যভূমিতে সশরীরে হাজির হন এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে।
তবে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে বিশ্বের বৃহত্তম রাম মন্দিরকে নিয়ে বেশ কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য সামনে এসেছে এই শুভদিনে। জানা গেছে, এই মন্দির দৈর্ঘ্যে ৩৮০ ফুট, প্রস্থে ২৫০ ফুট এবং উচ্চতায় ১৬১ ফুট। বলা বাহুল্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য কুতুব মিনারের থেকেও উঁচু হচ্ছে ভগবান রামের এই মন্দির। এছাড়াও রাম মন্দিরের প্রথম তলে ১৬০টি স্তম্ভ র্যেকগে। দ্বিতীয় তলে ১৩২টি ও তৃতীয় তলে ৭৪টি স্তম্ভ রয়েছে। মোট পাঁচটি মণ্ডপ রয়েছও মন্দিরে। রাম মন্দিরের দেওয়ালে বসানো হয়েছে বেলেপাথর ও মার্বেল। রাজস্থান থেকে এই পাথর আনানো হয়েছে। গোটা মন্দিরে কোনও স্টিল বা ইটের ব্যবহার হবে না। জানা গেছে, নাগারার অনুকরণে মন্দিরের স্থাপত্য বা আর্কিটেকচার করা হচ্ছে, যা ব্যবহৃত হয় গুপ্ত যুগে।
আর এইসব কারণেই মনে করা হচ্ছে যে কমপক্ষে হাজার বছর এই মন্দির অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবে। এই মন্দিরে কোনো লোহা ব্যবহার ককরে হয়নি কারণ লোহার বয়স ৮০-৯০ বছর। তাই পাথরের উপর পাথর ‘লক এন্ড কি’ পদ্ধতিতে বসানো হয়েছে। মন্দিরের ডিজাইন করেছেন চন্দ্রকান্ত বি সোমপুরা। এছাড়াও দেশের অনেক নামি বিজ্ঞানী এই মন্দির নির্মাণের নেপথ্যে মাথা ঘামিয়েছেন। এছাড়াও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সাহায্য করা হয়েছে এই মন্দির নির্মাণে। পাশাপাশি, সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার রামাচালিয়া এই নির্মাণের সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িত। বলা যায়, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের মিশেল ঘটিয়ে নির্মাণ হয়েছে এই মন্দিরের।
উল্লেখ্য, অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়েই। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এক ঐতিহাসিক রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, অযোধ্যার ওই বিতর্কিত নির্মাণ ভেঙে সেখানে রাম মন্দিরই তৈরি হবে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ রায়দানের সময় জানান, অযোধ্যার ওই বিতর্কিত স্থানের বদলে মুসলিম পক্ষকে অযোধ্যাতেই একটি বিকল্প জায়গা দেওয়া হবে মসজিদ তৈরির জন্য। সেই রায় মেনে উত্তরপ্রদেশ সরকার মুসলিমদের একটি বিকল্প জায়গা দিয়েছে। ২০১৯ সাল থেকেই শুরু হয়েছে এই মন্দির তৈরির কাজ। এখনো মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ন না হলেও মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হলেন ভগবান শ্রী রাম।