খাতায় কলমে এখনো গ্রীষ্মের আগমন ঘটেনি বাংলায়। কারণ এখনো চৈত্রের হিসেবে চলছে বসন্তকাল। কিন্তু ইতিমধ্যে গ্রীষ্মের প্রভাব পড়ে গিয়েছে বাংলার উপর। এবারের বাংলা নববর্ষ যে প্রবল গ্রীষ্মের মধ্যে ভ্যাপসা গরমে কাটবে বাঙালির, তা মোটামুটি বুঝতে পারা যাচ্ছে। কারণ ইতিমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ইতিমধ্যে কোনো কোনো স্থানে চল্লিশ ডিগ্রির উপরে উঠে গিয়েছে তাপমাত্রা। আর এই চাঁদিফাটা গরমে এখনই হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায়। ফলস্বরূপ চৈত্রের মাঝেই গ্রীষ্মের প্রভাব লক্ষ্যনীয়।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুদিন কলকাতায় তেমনভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যে কলকাতার বুকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৩৮ ডিগ্রি। এদিকে বুধবার থেকেই তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায়। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হচ্ছে চৈত্র মাসেই। এছাড়াও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একই পরিস্থিতি তৈরি হবার উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ জেলায়। তবে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে দেশের মোট ২২ রাজ্যে।
এই তাপপ্রবাহের কারণে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। প্রবল গরমের কারণে হিট-স্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন অনেকেই। তবে শুধু তাই নয়, তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতির উপরেও। দেশের বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়টিকে হিসেবনিকেশ করে পেয়েছেন এক আশ্চর্যকর তথ্য। বিশেষজ্ঞদের হিসেব বলছে যে এক বছর যদি তীব্র তাপপ্রবাহ হয় দেশজুড়ে, তার প্রভাব পড়বে আগামী কয়েকবছরের অর্থনীতির উপর। তাই ২০২৪ সালের এই তাপপ্রবাহের কারণে ২০৩০ সালে দেশের জিডিপি ২ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তার কারণ হল এই তীব্র গরমে অনেক কাজ ও ব্যবসা বাধ্য হয়েই বন্ধ রাখতে হয়।
তবে তাপপ্রবাহের যে শুধুমাত্র কু-প্রভাব পড়ে, তেমনটাও নয়। তাপপ্রবাহের ভালো কিছু প্রভাবও দেখা যেতে পারে ভারতে। তাপপ্রবাহের ফলে তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকে, তত বেশি পরিমাণে বিক্রি হয় এসি, ফ্রিজ, কুলার, ইলেকট্রিক পাখা, ইনভার্টার- এসব জিনিসের। একইভাবে ঠান্ডা পানীয়, বিভিন্ন ফল এবং জুসের বিক্রিও বাড়ে। এর ফলে অনেকেরই ব্যবসায় উন্নতি হয়। আর সেই কারণেই এটি তাপপ্রবাহের একটি ভালো প্রভাব হিসেবে ধরা যেতে পারে।