গত বছর ডিসেম্বরের ভরা শীতে মৌসম ভবন এক পূর্বাভাস জানিয়ে বলেছিল যে ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারি থেকেই পড়তে পারে গ্রীষ্মের প্রভাব। তারপর জানুয়ারির মাঝামাঝি এসে দেখা গেছে যে কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে বরফও পড়েনি। সাত বছর পর গুলমার্গে রীতিমতো বরফের খরা গেছিল। তবে ফেব্রুয়ারি কেটেছে ঠান্ডায় ঠান্ডায়। কিন্তু মার্চের শেষে দোলযাত্রা পেরোতেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি বাড়ছে জেলায় জেলায়। এবছর ব্যাপক গ্রীষ্ম পড়তে চলেছে। তার কারণ হল ‘এল-নিনো’র প্রভাব। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা এই বছর এল নিনোর প্রভাবে ব্যাপক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাবে দেশে।
উল্লেখ্য, ‘এল নিনো’ হল একটি স্প্যানিশ শব্দ। এককথায় এর অর্থ হল আচমকা অসময়ে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন। অর্থাৎ এল নিনোর মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ সমুদ্রস্রোতকে বোঝানো হয়। এই স্রোতের ফলে উষ্ণ হয়ে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল, বিশেষ করে পেরুর দিকে এর ফলে তাপমাত্রা বাড়ে ব্যাপকভাবে। এ সময় দক্ষিণ গোলার্ধের পুবালী বায়ুর প্রবাহ বদলে যায়। তবে এবার বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে উত্তর গোলার্ধ। এল নিনোর প্রভাবে এবার উত্তর গোলার্ধের একাধিক দেশে দেখা যেতে পারে প্রকৃতির এক অন্য রূপ। আর এই তালিকায় ভারতের নামও রয়েছে। অর্থাৎ ভারতে এর প্রভাব পড়তে পারে ব্যাপকভাবে।
গত বছর থেকেই ভারত এল নিনোর সক্রিয় পর্যায় অনুভব করেছে। এল নিনোর প্রভাব শুরু হয়েছিল গত বছর জুলাই মাসে। গত ডিসেম্বর মাসে এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল দক্ষিণ ভারতে৷ দক্ষিণ ভারতে আছড়ে পড়া এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি দেখে বিজ্ঞানীরা ভয় পেয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, এই ভয়ানক চেহারা দেখে আগামীদিনে আশঙ্কা আরও বাড়ছে৷ কারণ, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, উত্তর মহাসাগরে জলরাশি গরম হয়েছে ৩৮ শতাংশের মতো৷ সেখানে উত্তর পূর্ব প্রশাসন্ত মহাসাগরে গরম হওয়া ২২ শতাংশে আটকে আছে৷ আর তাতেই মহাপ্রলয়ের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে৷ এর ফলে, আরও ঝড় বেশি বৃদ্ধি পাবে৷ তাই ২০২৪ সালে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে সকলকেই।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আঠারোশো শতকে মাঝামাঝি সময়ে সব মিলিয়ে ৩২টি এল নিনো শনাক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া ১৯৪০-১৯৪১, ১৯৫৭-১৯৫৮ এবং ১৯৭২-১৯৭৩ সালে নাকি সবথেকে শক্তিশালী এল নিনোকে সনাক্ত করা হয়েছিল। তবে শেষবার ২০১৫-১৬ সালে এল নিনোর ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখেছিল ভারত। ওই বছর মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল। একাধিক রাজ্যে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে বছরও প্রায় স্বাভাবিক ছিল বর্ষা। কিন্তু, এল নিনো এসে সব ছারখার করে দিয়েছিল। ভয়াবহ বিপদের মুখে উত্তর গোলার্ধ। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে উত্তর গোলার্ধে আছড়ে পড়বে সুপার এল নিনো। সম্ভাবনা রয়েছে, এই পরিস্থিতির জেরে আবহাওয়ায় বিরাট পরিবর্তন হতে চলেছে।