শহর কলকাতার বুকে ১৯৮৪ সালে চালু হওয়া মেট্রোরেল পরিষেবা শহরকে এক ঐতিহ্য প্রদান করে। এই পাতালরেল পরিষেবা যেন তিলোত্তমা নগরীকে মাটির নিচেও গতিশীল বানিয়ে তুলেছে। একটা সময় উত্তর দক্ষিণে শুধুমাত্র দমদম থেকে টালিগঞ্জ এলাকার মধ্যে চালু ছিল মেট্রো পরিষেবা। পরবর্তীতে সেই রুট বর্ধিত করে উত্তরে দক্ষিণেশ্বর এবং দক্ষিণে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত করা হয়। আবার অন্যদিকে চালু হয় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা। এদিকে আবার রয়েছে জোকা-তারাতলা মেট্রো, যা ভবিষ্যতে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এদিকে আবার নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চলছে মেট্রোর কাজ।
কিন্তু শহরের মেট্রো বর্ধিকরণের মধ্যে যে ক’টি রুট রয়েছে সেখানের মেট্রো পরিষেবা দেখলে তা মোটেই সন্তোষজনক বলে মনে হবেনা। আর সেই কারণেই যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর উদ্দেশ্যে মেট্রোর সম্প্রসারণ ঘটলেও তা মোটেই হয়নি। যদি জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড মেট্রো রুটের দিকে দেখা যায়, তাহলে সেটিও এখনো অচল। জোকা না হোক, মাজেরহাট পর্যন্ত এই পরিষেবা চালু হলেও তা যাত্রীদের উপকার করবে। মাজেরহাট স্টেশনের কাজ সম্পূর্ন হয়ে গেলেও এখনো তা চালু করা যায়নি। অন্যদিকে কবি সুভাষ থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অবধি মেট্রো পরিষেবা নিয়েও চলছে টালবাহানা।
এবার যেসব রুটে ‘ওয়ান লাইন’ মেট্রো পরিষেবা চালু রয়েছে, সেখানে মেট্রো পাওয়া যায় কালে-ভদ্রে। কাজেই নিত্যযাত্রীদের ক্ষেত্রে কোনো সমাধানই দিচ্ছে না সেইসব রুটের মেট্রো পরিষেবা। তাই এইসব রুটে অরেঞ্জ লাইন চালুর বিষয়ে দাবি উঠে আসছে। আর শহরের মেট্রোর এই সমস্যা দূর করার মোক্ষম সময় রয়েছে কেন্দ্রের হাতে। কারণ ভোটের আগে মানুষের সমস্যা ঘুচিয়ে দিতে পারলে যে তা বিজেপির পক্ষে লাভজনক হবে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। সেই কারণেই ভোট ঘোষণার আগে কলকাতার বুকে একাধিক মেট্রো রুট উদ্বোধন করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে কলকাতা মেট্রোর জন্য বিরাট বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। ২০১৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য দমদম থেকে রাজারহাট হয়ে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো রুটকে প্রসারিত করার জন্য ১৭৯১ কোটি ৩৯ লক্ষ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। এটি ছাড়াও অন্যান্য রুটেও বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দ। জোকা থেকে মাঝেরহাট হয়ে বিবাদী বাগ পর্যন্ত মেট্রো প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৮৫০ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে তা প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই রুটের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ করা হয়েছে ১২০৮ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়াও বরানগর থেকে ব্যারাকপুর হয়ে দক্ষিণেশ্বর অবধি মেট্রো রুটে বরাদ্দ হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এছাড়াও নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর হয়ে বারাসাত মেট্রোর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।